» কোরবানি ও এর তাৎপর্য…

যারা কোরবানিকে শুধুই একটি প্রাচীন প্রথা মনে করেন অথবা লোক দেখানোর জন্য কোরবানি করে থাকেন আমার মনে হয় তাদের কোরবানি করা আর না করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারন ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর’ ( সূরা কাওসার:২)

জিলহজ মাসের দশ, এগারো, বারো তারিখ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র এ কোরবানির উৎসব বা ঈদুল আজহা শুধু প্রতীকী অনুষ্ঠান মাত্র নয়, এর প্রকৃত রূপ হলো মনের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাকওয়া নিয়ে প্রিয় বস্তু তাঁর নামে উৎসর্গ করা। প্রাক-ইসলামী যুগে মানুষ কোরবানির করার পর কোরবানির পশুর গোশ্ত আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করার জন্য কা'বা ঘরের সামনে এনে রেখে দিত, পশুর রক্ত কা'বার দেয়ালে লেপ্টে দিত। সূরা হজের ৩৭ নং আয়াতে এ কুপ্রথার মূলেৎপাটন করে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : কোরবানির পশুর রক্ত-মাংসের কোন প্রয়োজন আল্লাহর নেই; তিনি যা চান তা হলো কোরবানিরকারীর তাকওয়া, আল্লাহর প্রতি একান্ত আনুগত্য ও আল্লাহর প্রতি মু'মিন-চিত্তের একাগ্রতা।

প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যরূপী আমাদের ভেতরের পশু তথা নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও বীভৎসতাকে অর্থাৎ অন্তরের মধ্যে বসবাসকারী পশুকে জবাই করা এবং হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, অহঙ্কার, প্রভাব-প্রতিপত্তি বিসর্জন দিয়ে মানবতা ও ভ্রাতৃত্বোধে উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষাই কোরবানির মহান শিক্ষা। ফলে আত্মশুদ্ধি ঘটবে, মনের তাকওয়া অর্জিত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তরা, গরিব-দুঃখীরাও যাতে ঈদের আনন্দ করতে পারে সে লক্ষে কেবল ভোগ নয়, ত্যাগ-তিতিক্ষার মনোভাব নিয়ে তাদের মধ্যে কোরবানির গোশতের একটি অংশ ও চামড়ার টাকা বিলিয়ে দিতে হবে। কোরবানির নির্দেশ মোতাবেক কোরবানি করে গোশত ও চামড়ার টাকা গরিব, নিঃস্ব, দীন-দুঃখীদের দেয়া মানে আল্লাহর নামেই উৎসর্গ করা।

Bookmark the permalink.

One Response to » কোরবানি ও এর তাৎপর্য…

  1. Md. Golzar Hossain says:

    Comments